লক্ষী শর্মা : শিলিগুড়ি শহরজুড়ে বাড়ছে নিষিদ্ধ মাদক কারবারিদের রমরমা বাজার। যার জেরে বাড়ছে মাদক সনক্রান্ত অপরাধ। এর ফলে রাতের শিলিগুড়ি নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড়ো প্রশ্ন তুলে দিল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা। মাদক কারবারে শহরে ছয়টি হটস্পট চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। অভিযোগ সেই জোন গুলি হয়ে উঠেছে মাদকের স্বর্গরাজ্য। ১৯ আগস্ট “এলসেভিয়ারের বিখ্যাত জার্নাল অ্যাপ্লায়েড” গবেষণাপত্রটিতে এমনই তথ্য তুলে ধরে প্রকাশিত হয়।
আর যৌথভাবে এই গবেষণার কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরী এবং গবেষক শুভম রায়। তাঁদের এই গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের মাদক যেমন ১) শক্তিশালি মাদক ( ব্রাউন সুগার, হিরোইন,কোকেন ), ২) মদ ৩) গাঁজা ৪) ব্যাবহারিক ওষুধ ( কাশির সিরাপ,ক্যাপসুল ) চার ভাগে ভাগ করে সেই সংক্রান্ত অপরাধগুলো নিয়েই মূলত এই গবেষণায় চর্চা করা হয়েছে।

গবেষণা অনুসারে ১৮-৪০ বছর বয়সিরাই মাদকের সবথেকে বড় ক্রেতা। তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ পুরুষ এবং ২৫ শতাংশ মহিলা ক্রেতা। গবেষণায় উঠে এসেছে এই সকল মাদকের কারবারিরা শহরে চুরি, ইভটিজিং ,ছিনতাই ,দেহব্যবসা এই সকল নানান কাজে যুক্ত হচ্ছে। গবেষণায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত পরিমান ক্যামেরা নেই থাকলেও সেগুলি বেশির ভাগ অকেজো।
অপরাধ বাড়লেও তা আটকাতে কতটাই বা সক্রিয় পুলিশ? এককথায় গবেষকরা জানিয়েছে, প্রশাসনের ভূমিকা সদর্থক নয়। পুলিশের কোনও আধিকারিকই গবেষণা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুই গবেষক ২০২১ থেকে ২০২৩, তিন বছর ধরে শিলিগুড়ি শহরে মাদক সংক্রান্ত অপরাধের ওপর তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করেছেন। অর্থাৎ কোথায় কোন ধরণের মাদকের বিক্রি, পাচার বা সেই সংক্রান্ত অপরাধ বেড়েছে সেগুলি আলাদা ভাবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।
চারধরনের মাদক কারবার যে সকল এলকায় বেড়েছে গবেষণায় সেই এলকাগুলিকে “হটস্পট জোন” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণায় একটি হটস্পট জোনকে একটি “লোকেশন” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। লোকেশন ১-এ শিলিগুড়ি পুরনিগমের ২, ৪৫, ৪৬ এবং ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে। লোকেশন ২-এ রয়েছে শিলিগুড়ি জংশন এলকা। লোকেশন ৩-এ রয়েছে ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২৭, ২৮ এবং ২৯ এই ছটি ওয়ার্ড।
লোকেশন ৪ -এ রয়েছে গঙ্গানগর, জনতা নগর, সূর্য সেন পার্ক এবং মহানন্দাপাড়া। লোকেশন ৫-এ নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ও তাঁর পার্শ্ববর্তী এলকা। লোকেশন ৬- এ ঈন্দিরা গান্ধি ময়দান, প্রকাশ নগর এবং শালুগাড়া বাজার। হটস্পটের বাইরেও মাল্লাগুড়ি ,গুরুংবস্তি , দার্জিলিং মোড় এবং বাঘা যতীন পার্ক এলকার মাদক কারবার নিয়ে বেশি করে উষ্মা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।